নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ দখলের চেষ্টা জাপা’র

প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৬ সময়ঃ ১০:১৮ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১০:২৩ অপরাহ্ণ

কাজী লুৎফুল কবীরঃ

unnamed-1

জাতীয় কাউন্সিলের পর দলকে শক্তিশালী করতে কোমর বেধেঁ মাঠে নেমেছে জাতীয় পাটি। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র, সবখানে লেগেছে শক্তি সঞ্চয়ের ঢেউ। বিশেষ করে আগাম নির্বাচনের সম্ভব্নাকে সামনে রেখে মাঠ দখলের চেষ্টায় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীদের ব্যস্ত রাখতে নেয়া হয়েছে কর্মসূচী।

সে অনুযায়ী ঈদের পর সারাদেশে সমাবেশের মাধ্যমে মাঠে নামবার ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান,সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তারই আলোকে আগামী পহেলা অক্টোবর সিলেটে হযরত শাহজালালের মাজার জিয়ারত ও সমাবেশের মধ্যদিয়ে হাতে নেয়া নতুন সাংগঠনিক কর্মসূচীর উদ্বোধন করবেন তিনি।

ersgad-0222এরইমধ্যে দলের শীর্ষনেতাদের সমন্বয়ে দেশব্যাপী গঠন করা হয়েছে ৫২টি সাংগঠনিক টিম। ৭৬টি সাংগঠনিক জেলা, দেশের সকল উপজেলা, পৌরসভা-ইউনিয়ন ও মহানগর এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোকে দেয়া হয়েছে কড়া নির্দেশনা। দলকে তৃণমূলে ঢেলে সাজাতে জাতীয় কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত এবং সম্প্রতি পরবর্তী নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতি নিতে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আহবানকে সামনে রেখেই চলছে সাংগঠনিক তৎপরতা। সে আলোকে ৩০০ আসনে যোগ্য প্রার্থী ঠিক করতে মাঠে নেমেছেন দলের শীর্ষ নের্তৃত্ব। শক্ত প্রার্থী খুঁজে পেতে সহযোগীতা নেয়া হচ্ছে তৃণমূল নেতাদের। আর সে কারণে সাংগঠনিক টিমসহ সবাইকে দেয়া হয়েছে কঠোর নির্দেশনা।

সাংগঠনিক টিমগুলোকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জেলা কমিটির সঙ্গে বৈঠক করার সময়সীমা বেধে দেয়া হয়েছে। হুশিয়ারী জানিয়ে বলা হয়েছে এ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে সাংগঠনিক টিম বাতিল বলে গণ্য হবে। দেয়া হবে না কোন প্রকার ছাড়। পরবর্তীতে পার্টির চেয়ারম্যানের সম্মত্তি নিয়ে অন্য টিমকে দেয়া হবে সাংগঠনিক দায়িত্ব। টিমগুলোকে জেলা-উপজেলা,পৌরসভা,মহানগর এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মেয়াদ উত্তীর্ন কমিটি গঠনে সাহায্য-সহযোগিতা এবং পরামর্শ দেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তবে সাংগঠনিক জটিলতা দেখা দিলে,উভয় পক্ষের মতামত নিয়ে কেন্দ্রের সম্মত্তি সাপেক্ষে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।

সাংগঠনিক এই কার্যক্রম সারাদেশে একযোগে সম্পন্ন করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির নবনির্বাচিত যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক। প্রতিক্ষণকে তিনি বলেন,নির্বাচনকে সামনে রেখে যোগ্য প্রার্থী সন্ধান এবং দলকে শক্তিশালী ও গতিশীল করার অব্যাহত চেষ্টার অংশ হিসেবে সাংগঠনিক এই কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। গঠিত সাংগঠনিক টিমগুলোর নের্তৃত্বে আছেন দলের শীর্ষনেতারা। সাথে রাখা হয়েছে কেন্দ্রীয় তরুণ নেতাদের। পাশাপাশি কার্যক্রমকে প্রতিবন্ধকতাহীন করতে প্রত্যেক জেলার কেন্দ্রীয় সদস্যরা সাংগঠনিক টিমের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

unnamed-3এছাড়া বিভাগীয় শহরগুলোতে বড় ধরনের শোডাউন করবে জাতীয় পার্টি। সে লক্ষ্যে সাংগঠনিক টিমসহ দলের শীর্ষনেতারা সব জেলা শহরে সভা-সমাবেশ করবেন। কোথাও কোথাও পার্টির চেয়ারম্যানও অংশ নেবেন বলে জানিয়েছে দলের একটি সূত্র। আর তারই আলোকে ঈদের পর সিলেটে বেশকটি সমাবেশে ব্ক্তব্য রাখবেন এরশাদ। এরপর বৃহত্তর রংপুরের সব কটি জেলায় সমাবেশ করবেন তিনি। পাশাপাশি চট্টগ্রাম,ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল ও রাজশাহীতে বড় ধরনের সমাবেশ করবে জাপা। এসব সমাবেশ শেষে আগামী ডিসেম্বরে ঢাকায় মহাসমাবেশ করার পরিকল্পনাও রয়েছে। ওই সমাবেশ থেকে আগামী নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেয়ার ঘোষনাও আসতে পারে বলে জানিয়েছে দলের একটি বিশ্বস্তসূত্র।

এ বিষয়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ বলেন, সামনের দিনগুলোতে বিরোধী দল হিসেবে বড় ধরনের শক্তি নিয়ে মাঠে থাকার প্রয়োজন হবে। জনগণ জাতীয় পার্টির সঙ্গে আছে দাবি করে তিনি বলেন,নির্বাচন বলুন অথবা অন্য যে কোন গণতান্ত্রিক পদক্ষেপের জন্য দলকে শক্তিশালী করতেই সাংগঠনিক এই কার্যক্রম।

মীর আসুদ বলেন,নির্দেশ অনুযায়ী সব ধরনের সহযোগিতা করতে দলের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত আছেন। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক শীর্ষনেতা এই প্রতিবেদকে জানান,আসলে এরশাদকে দেখাতেই সাংগঠনিক কার্যক্রমের তোড়জোর। প্রকৃত অর্থে বড় ধরনের কিছু হবে বলে মনে হয় না। কথা হয় পার্টির নব নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান, এক সময়ের রাজপথের তুখোর ছাত্রনেতা, এরশাদ মুক্তি আন্দোলনের অগ্র সৈনিক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজুর সঙ্গে।

unnamed-4

তিনি বলেন,শীর্ষনেতারা আন্তরিকতার সাথে জেলা-উপজেলার মধ্যে সমন্বয় সঠিকভাবে করতে পারলে, বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে কার্যক্রম পরিচালনাখুব বেশী কঠিন হবে না। তবে যেসব জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কাঠামোগত সমস্যা আছে, সেসব ক্ষেত্রে দলের নির্দেশিত সময়ের মধ্যে তৃণমূল কমিটি গঠন খুব সহজ হবে না। দলকে শক্তিশালী করতে সাংগঠনিক টিমের নামে একজনকে পাঁচ-ছয়টি কমিটিতে রাখার অর্থই হলো মূলতঃ পিকনিক পিকনিক খেলা ছাড়া আর কিছুই নয়, বলে মন্তব্য করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পার্টির অপর শীর্ষনেতা। এমনকি এরশাদের বিরুদ্ধাচরণকারী বির্তকিত শীর্ষনেতাদের নের্তৃত্বে গঠিত টিম কতটা গুরুত্বের সঙ্গে দলের পক্ষে আন্তরিকতায় সাংগঠনিক কার্যক্রম সম্পন্ন করবে এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে বলেও তিনি জোর আপত্তি জানান।

এ বিষয় ইকবাল রাজু বলেন, দলকে গতিশীল করতেই সাংগঠনিক এই প্রক্রিয়া। তবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিশেষ করে রাজনীতির প্রতি মানুষের যে অনীহাভাব সে অবস্থায় এটা কিছুটা কঠিন, তা তো বলাই যায়। দলের অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী বলেন, শুধু গতানুগতিক কাঠামো তৈরী করার উদ্দেশ্যে নয়, জনগণের জন্য সঠিক রাজনৈতিক একটি ব্ক্তব্য নেয়া গেলে, স্বপ্ল সময়ের মধ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রমে শতভাগ সফলতা না আসলেও মোটাদাগে সাফল্য আসবে অবশ্যই। তবে জনগণের জন্য সত্যিকার অর্থে একটি ম্যাসেজ থাকতে হবে।

unnamed-2তিনি বলেন, পার্টিকে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান পরিস্কার করতে হবে। জাতীয় পার্টি বিরোধী দল নাকি সরকারী দল, নাকি বেসরকারী দল কোনটি? সে বিষয়ে পরিচ্ছন ম্যাসেজ নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে যেতে পারলেই, পল্লীবন্ধুর উন্নয়নের পক্ষে জনশ্রোত আবারো তৈরী করা সহজ হবে বলে বিশ্বাস করেন প্রবীন এই রাজনীতিবিদ। সাংগঠনিক টিম গঠনকে সাধুবাদ জানিয়ে দলের নবনির্বাচিত যুগ্ম মহাসচিব নাজমা আক্তার বলেন, নেতায় নেতায় মত দ্বিমতের দূরত্ব কমিয়ে আনা গেলে স্বল্প সময়ে সম্মিলিত চেষ্টায় গ্রাম পর্যায়ও দলকে সুসংগঠিত করা সম্ভব।

তিনি বলেন, কেন যেন এথনও চিন্তার ক্ষেত্রে একটি দূরুত্ব রয়েছে। বিশেষ করে নিজ জেলা ফেনীর কথা উল্লেখ করে এই নারীনেত্রী বলেন, কেউ কাউকে না মানার সংস্কৃতি শক্তিশালী সংগঠন করতে অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছে। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনে কোন জেলায় একাধিক সদস্য করা, আবার কোথাও সিনিয়রকে জুনিয়র পদ দেয়া কিম্বা জুনিয়রকে সিনিয়র পদে পদন্নোতি দেয়ায়-হাইকমান্ডের এ ধরনের সিদ্ধান্তে সমন্বয়হীনতা আরো বেড়েছে বলে দাবি করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কেন্দ্রীয় সদস্য।

তিনি প্রশ্ন করে বলেন, এ অবস্থায় সাংগঠনিক টিমের কার্যক্রম সুসংগঠিতভাবে চলবে কি করে? সাংগঠনিক টিমের কার্যক্রম নিয়ে টেলিফোনে প্রতিক্ষণের সঙ্গে কথা বলেন দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। তিনি জানান,তৃণমূলসহ দলের সকল স্তরে শক্তি অর্জন করে দেশের মানুষকে জাতীয় পার্টির পতাকাতলে নিয়ে এসে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সমর্থন আদায়ের জন্যই এই কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, স্বল্প সময় বড় ধরনের তৎপরতা অবশ্যই সম্ভব, যদি দলের সকল স্তরের নেতাকর্মী বিশেষ করে শীর্ষনেতারা আন্তরিকতা,সততা এবং নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে ঐক্যবদ্বভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশ নেন। এক প্রশ্নের জবাবে মহাসচিব সাংগঠনিক টিম গঠনে কোন অনিয়ম দেখা গেলে কঠোর হাতে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।

তিনি বলেন, সারাদেশে আগেই দলের একটি সাংগঠনিক অবস্থান আছে। জেলা-উপজেলাগুলোতে পূর্ণাঙ্গ কমিটিও রয়েছে। কোথাও হয়তো মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। আবার কোথাও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ধে অস্থবিরতা তৈরী হয়েছে। তবে সাংগঠনিক কার্যক্রমে আমাদের মূল উদ্দেশ্য ইউনিয়ন পর্যায়ে শক্ত কমিটি গঠন করা। পাশাপাশি জেলা উপজেলায় পার্টি এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করা। জাপা মহাসচিব বলেন, এর মধ্যদিয়ে পল্লীবন্ধুর জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যাতে করে একক নির্বাচনের প্রয়োজন হলে, তা যেন কোন ধরনের দূর্বলতার মুখে পড়তে না হয়।

এদিকে শুক্রবার শীর্ষনেতাদের সাথে নিয়ে বিভাগীয় শহর সিলেটে হযরত শাহজালালের মাজার জিয়ারতের মধ্যদিয়ে সাগঠনিক এই কার্যক্রমের প্রাথমিক যাত্রা শুরু করেন দলের মহাসচিব এবিএম রহুল আমিন হাওলাদার। পরে বৃহত্তর সিলেটের সব জেলা-উপজেলা ও মহানগর কমিটির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। এ সময় জাপা মহাসচিব পহেলা অক্টোবর দলের চেয়ারম্যানের কর্মসূচীর কথা জানান। এরশাদের সমাবেশকে সফল করতে কি কি পদক্ষেপ নেয়া যায়, সে বিষয়ে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার করতেই মহাসচিবসহ দলের শীর্ষনেতারা শুক্রবার সিলেট যান।      

======

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G